শসা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

শসা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি। প্রায় সারা বছর জুড়েই এই সবজির চাষ হয়ে থাকে। শসার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করবো। এটি অত্যন্ত সহজলভ্য এবং শারীরিক নানা উপকারিতার পাশাপাশি রূপচর্চায় এর ভূমিকা রয়েছে অপরিসীম।

শসার কিছু উপকারিতা

শসা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি। প্রায় বারো মাসই পাওয়া যায় এটি। শসার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা, ওজন নিয়ন্ত্রণ, দেহের পানির অভাব পূরন, রূপচর্চাসহ নানা উপযোগিতা আছে এই সহজলভ্য সবজিটির। শসাতে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকে (৯৫ ভাগ), ফলে এটি শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে এবং ভেতরের তাপমাত্রা কে নিয়ন্ত্রণ করে দেহ শীতল রাখতে সহায়তা করে। শসায় ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম এবং এতে কোনো চর্বি বা কোলেস্টেরল নেই। শসার মত একটি পুষ্টিকর সবজির রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টিগুন এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য উপকারিতাও। আসুন আমারা শসার উপকারিতা গুলো আজ জেনে নেই

শসা দেহের পানির ঘাটতি পূরণ করে

যদি কোনো কারণে পানি কম পান করা হয়, তাহলে শসা খেয়ে নিন কারন শসার ৯৫ শতাংশই পানি। তাই সহজেই পানির ঘাটতি পূরণ হয়ে যায় এবং পেট ঠাণ্ডা থাকে।

ত্বকের পরিচর্যায় শসা

শসাতে ভিটামিন এ, বি ও সি বিদ্যমান যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শক্তি বাড়ায়। তাছাড়া শসায় উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও সিলিকন থাকে, যা ত্বকের পরিচর্যায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ জন্য ত্বকের পরিচর্যায় শসা ব্যবহার করা হয়। সূর্যের তাপে ত্বকে জ্বালা অনুভব করলে শসা কেটে ত্বকে ঘষে নিন নিশ্চিত ফল পাবেন।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে

ফাইবার ও ফ্লুইডসমৃদ্ধ শসা শরীরে ফাইবার এবং পানির পরিমাণ বাড়ায়। শসায় রয়েছে স্টেরল নামের এক ধরনের উপাদান, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফাইবার থাকার কারণে শসা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

শসায় উচ্চমাত্রায় পানি ও ফাইবার এবং নিম্নমাত্রার ক্যালরি রয়েছে যা দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে, যারা ওজন কমাতে চান, তাঁদের জন্য শসা আদর্শ টনিক হিসেবে কাজ করবে। কাঁচা শসা চিবিয়ে খেলে তা হজমে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে।

হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

এরেপসিন নামক অ্যানজাইম থাকার কারণে শসা হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সমাধান করে থাকে। নিয়মিত শসা খেলে দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠ-কাঠিন্য দূর হয় এবং শসার মধ্যে যে পানি থাকে তা আমাদের দেহের বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে সাহায্য করে। এছাড়া শসার রস আলসার, গ্যাস্ট্রাইটিস, অ্যাসিডিটির ক্ষেত্রেও উপকারী।

ডায়াবেটিস ও কিডনির জন্য উপকারী

ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি দেয়, কোলস্টেরল কমায় ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাছাড়া শরীরের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা ঠিক রাখে শসা। এতে কিডনি থাকে সুস্থ ও সতেজ।

চোখের যত্নে শসা

গোল করে কেটে চোখের পাতায় বসিয়ে দিলে চোখের পাতায় জমে থাকা ময়লা যেমন অপসারিত হয়, তেমনি চোখের জ্যোতি বাড়াতেও কাজ করে। শসার মধ্যে যে খনিজ সিলিকা থাকে তা আমাদের চুল ও নখকে সতেজ ও শক্তিশালী করে তোলে।

এছাড়া শসা ওবেসিটি বা ওজন নিয়ন্ত্রণে খুব উপকারী। মিনারেলসমৃদ্ধ শসা নখ ভালো রাখতে এবং দাঁত ও মাড়ির সমস্যায় সাহায্য করে। মাথাধরা থেকে নিষ্কৃতি, গেঁটেবাত থেকে মুক্তি, কিডনি, ইউরিনারি, ব্লাডার, লিভার ও প্যানক্রিয়াসের সমস্যায় শসা বেশ সাহায্য করে থাকে। এছাড়া জরায়ু, স্তন ও মূত্রগ্রন্থিসহ বিভিন্ন স্থানে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমায়।

শশার অপকারিতা

শশা হচ্ছে, একটি লো ক্যালরি বা খুব কম ক্যালরিযুক্ত একটি খাবার। শশার মধ্যে পানির পরিমাণ অনেক। ১০০ গ্রাম শসাতে পানির পরিমাণ ৯৪.৯ গ্রাম এবং ক্যালরি ২২ কিলো ক্যালরি এছাড়াও শশা একটি ভাল মানের এন্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার।

শশাতে কিছু পরিমাণ ভিটামিন,মিনারেলস এবং আঁশ থাকে।কিন্তু ভাল একটি খাবার শশাও মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে যায় যখন কেউ মনে করে শুধুমাত্র শশা খেয়ে ওজন কমানো যায়। শশাকে ওজন কমানোর একমাত্র ওষুধ মনে করে। আমরা ডায়টেশিয়ানরা ডয়েট চার্টে শসাটা রাখি। কিন্তু শুধু শশা খেয়ে আমরা ওজন কমাতে বলি না। কিন্তু অনেকেই ওজন কমানোর জন্য শশাকে ওষুধ হিসবে ধরে নিয়ে সারাদিন ধরে শশা খেতে থাকে। যখনই ক্ষুধা লাগে শশা খেতে শুরু করে।

যেহেতু শশা একটি কম ক্যালরিযুক্ত খাবার তাই শশা কেন অন্য যেকোন কম ক্যালরি যুক্ত খাবার একনাগারে খেতে থাকলে ওজন কমে যাবে। কিন্তু সেই সঙ্গে আপনার শরীরে দেখা দেবে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদনের ঘাটতি। অন্য খাবার কম খেয়ে সারাদিন বা অতিরিক্ত পরিমানে শশা খেতে থাকলে বা ক্ষুধা লাগলেই শশা খেলে বদহজম, গ্যাসের সমস্যাসহ পেট ফাঁপা, পেট ব্যাথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি দেখা দেয়।

প্রায় এক মাস ধরে ওজন কমাতে সারাক্ষণ শশা খেলেই ঘটবে নানা বিপত্তি। শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে শরীর ভীষণ দুর্বল হয়ে যাবে। কাজ করার শক্তি পাবেন না। রক্ত কমে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এছাড়াও রক্তে গ্লুকোজের অভাবে মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url